শিরোনাম
Home / টঙ্গীবাড়ী উপজেলা / টঙ্গিবাড়ীর পদ্মার চরে মৌসুমী শ্রমিকরা শীতে চরম ভোগান্তিতে

টঙ্গিবাড়ীর পদ্মার চরে মৌসুমী শ্রমিকরা শীতে চরম ভোগান্তিতে

[ A+ ] /[ A- ]

টঙ্গিবাড়ীর পদ্মার চরে মৌসুমী শ্রমিকরা শীতে চরম ভোগান্তিতে

নিজস্ব প্রতিনিধি- খুদেজা বেগম (৬০)। অসুস্থ স্বামী তারা মিয়া (৭০), নাতনি লিজা মনি (১২) ও নাতি সুজনকে (১০) নিয়ে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পদ্মার চড়ে বসবাস করে সে। খড়, ধইঞ্চা, পাটখড়ি দিয়ে উন্মুক্ত চরে কুড়ে ঘর তুলে কর্মের তাগিদে বসবাস করে তারা । তাদের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। চার সদস্যের সংসারে একমাত্র রোজগার করার ব্যক্তিটিই হচ্ছেন বৃদ্ধা খুদেজা। প্রতিদিন ২’শ থেকে আড়াই’শ টাকা রোজগার করে সে । তাদিয়ে সংসারের ছোট্ট চুলোয় আগুন জ্বলে, তবে দিনে নয় রাতে। কেননা খুদেজা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অন্যের জমিতে কাজ করেন। দিন শেষে কাজের পারিশ্রমিক দিয়ে নাতি-নাতনি ও স্বামীর জন্য খাদ্যদ্রব্য নিয়ে বাসায় ফিরেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় চরাঞ্চলে অস্থায়ী শতাধিক ছোট ছোট খড়কুটোর ঘর দেখা যায়। সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা নেত্রকোনা জেলার। এছাড়াও রংপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামের মানুষজন রয়েছে। মূলত তারা সকলে মুন্সীগঞ্জে আলু রোপন ও উত্তোলনসহ কৃষি কাজ করতে এসেছেন।
খোদেজা জানান, এবার একখান কম্বল পাইছি বাজান। কিন্তু কম্বলটা একেবারে হাতলা। হাতলা কম্বলে শীত মানে না । যদি কায়ো কম্বল দিবার চায় তাক কন, য্যান ভাল এক খান কম্বল দেয়।’

অস্থায়ী এসব বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, তারা প্রতিবছর আলু রোপনের সময় এই জেলায় আসেন। আলুর জমি পরিচর্যাসহ অন্যান্য কৃষিকাজ করে থাকেন এবং উত্তোলন শেষে নিজ জেলায় ফিরে যান। এতে শীতের পুরোটা সময় খড়কুটোর এসব ঘড়ে বসবাস করতে হয়। উন্মুক্ত চরে গাছপালা না থাকায় হিমেল হাওয়ায় শীতে জড়োসড়ো হয়ে থাকে তারা।

খুদেজা বেগম আরো বলেন, ‘আমার চারটি ছেলে, কোনো মেয়ে নেই। এক ছেলে দেশের বাড়িতে থাকেন। বাকি দুই ছেলে এই জেলায় বদলি-কামলা দেয়। তারা আমার খোঁজখবর নেয় না, পৃথক থাকে। আর এই নাতি-নাতনির মা আরো ৫ থেকে ৬ বছর আগে আমার ছেলেকে রেখে চলে যায়। পরে আমার ছেলেটারও কোনো খোঁজ নাই। বুড়ো বয়সে এখন ওদের দায়িত্ব আমার কাঁধে পড়েছে। এখন দুই বেলা মুখে খাবার দিবো নাকি শীতের পোশাক দিবো। অন্যদিকে বুড়ো স্বামীর অজানা রোগে একটি পা প্যারালাইস হয়ে গেছে।’

খুদেজার মতো বৃদ্ধ আলী হোসেন (৬৫) একটি খড়ের ঘরে বসবাস করেন। কিন্তু রাতে ঘরের ভেতর চারপাশ দিয়ে বাতাস ঢোকে। এতে শীতে তিনি খুব কষ্ট করছেন। বৃদ্ধ আলী হোসেন বলেন, ‘বুড়া মানুষগোরে শীত বেশি। রাতে শীতে ঘুমাবার পাই না। খ্যাতা দিয়া উম হয় না। খ্যাতাও ছেঁড়া। কত কষ্ট কইর‌্যা শীতে থাকি। কয়েকজন কম্বল দিয়া গেছে। এত হাতল, যা দিয়া ঠান্ডা কমে না।’

কুড়িগ্রাম থেকে মুন্সীগঞ্জে চুক্তিতে আলু রোপণ করতে এসেছেন দিদার মিয়া (৪৫) । তিন মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে ৭ সদস্যের অভাবের সংসার তার। কোনোমতে খড়কুটো দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করেছেন সে।
দিদার মিয়া বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। জমিতে গিয়ে কাজ করাটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে নদী এলাকায় বাতাস বইছে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় আমাদেরকে নিদারুণ কষ্টে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে।’

সরকারি ও বেসরকারিভাবে চরাঞ্চলের শীতার্ত ভাসমান এসব মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভীন বলেন, ‘এ বছর সরকারিভাবে উপজেলার অসহায় শীতার্তদের মাঝে ইতোমধ্যে ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি ভাসমান অস্থায়ী শীতার্তদের মধ্যেও কম্বল বিতরণ করা হয়।’

মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। তাই সকলকে সচেতন থাকতে হবে। ঠান্ডা-কাশি থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। তবে শীতে করোনার যেই সেকেন্ড ওয়েবের আশঙ্কা করেছিলাম সেটা এখন পর্যন্ত তেমনভাবে দেখা যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*