নিজস্ব প্রতিনিধি – মুন্সীগঞ্জের ঝুমনের স্ত্রী রুবিনা আক্তার ও তার ছেলে জিহাদের লাশ গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তা দায়পাড়া এলাকার বসতঘর হতে শনিবার বিকেলে উদ্ধার করা হয়েছে।
ছয় বছরের শিশুপুত্র জিহাদকে বুকে নিয়ে বসতঘরে খাটের ওপর শোয়া রুবিনা আক্তার। লেপে ঢেকে আছে মা-ছেলের অর্ধেক শরীর। নিথর নিস্তব্ধ দেহ দু’টির ওপর উড়ছিল মাছি। তালাবদ্ধ ওই ঘর থেকে আসছিল পঁচা গন্ধ। একটু দূরেই পড়ে আছে বিরিয়ানির একটি প্যাকেট। মা-ছেলের মরদেহ ঘরে থাকলেও স্বজনরা জানেন না সে খবর। গত চারদিন ধরে খুঁজে ফিরছিলেন তারা।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। একই সঙ্গে পিবিআই, সিআইডিসহ অন্য বিভাগ ছায়া তদন্ত করছে। আশা করছি, শিগগিরই ঘটনাটির রহস্য উন্মোচন হবে।’ তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা তদন্তে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। নিহত দুজনের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তরের পর স্বজনেরা থানায় মামলা করতে আসবেন বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় রুবিনার স্বামীকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়েছে।
শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শ্রীপুরের প্রশিকা মোড় এলাকায় তালাবদ্ধ ঘর থেকে রুবিনা খাতুন (২২) ও রুবিনার ছেলে মো. জিহাদের (৪) লাশ উদ্ধার করা হয়। রুবিনা শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলামের মেয়ে। এর আগে পাঁচ দিন ধরে মা-ছেলের হদিস পাচ্ছিলেন না স্বজনেরা। কোথাও না পেয়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে থাকার ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। সন্দেহ হলে দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে মা-ছেলের লাশ পাওয়া যায়। লাশ দুটি অর্ধগলিত ও তাতে পচন ধরে ছিল।
নিহত মা ছেলের প্রতিবেশীরা জানান, মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ঝুমন হোসেন মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় এসে জমি কিনে বাড়ি করেন। এর আগেই দায়পাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের কন্যা রুবিনাকে বিয়ে করে সংসার পাতেন তিনি। একটি ওয়ার্কশপে কাজ করে ঝুমন সংসার চালান। জিহাদ নামে ৬ বছরের ওই পুত্র সন্তান ছিল তাদের। গত বুধবার হঠাৎ করেই রুবিনা ও তার ছেলে জিহাদ নিখোঁজ হয়ে যায়। তাদের বাড়ির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। বসত ঘরের বাইরে থেকে তালা দেওয়া। এ কারণে স্বজনদের কেউ আর বাড়িতে খোঁজ নেয়নি।
রুবিনার বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাত বছর আগে মুন্সীগঞ্জের মো. ঝুমন মিয়ার সঙ্গে রুবিনার বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে একমাত্র সন্তান জিহাদ ছিল। প্রশিকা মোড় এলাকায় মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে থাকার জন্য বাড়ি করে দিয়েছিলেন তিনি (সিরাজুল ইসলাম)। সেখানেই সন্তানসহ তাঁরা থাকতেন। ঝুমন নয়নপুর এলাকায় চাকরি করেন। বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিবাদ চলছিল। গত মঙ্গলবার থেকে রুবিনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছিলেন না স্বজনেরা। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত গতকাল রুবিনা ও তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।