শিরোনাম
Home / লিড নিউজ / মুন্সীগঞ্জের ১০ লাখ লোকের যাতায়াতের রাস্তার সেতুর মূল দুই পিলার দৃশ্যমান হয়নি ৪ বছরেও

মুন্সীগঞ্জের ১০ লাখ লোকের যাতায়াতের রাস্তার সেতুর মূল দুই পিলার দৃশ্যমান হয়নি ৪ বছরেও

[ A+ ] /[ A- ]

মুন্সীগঞ্জের ১০ লাখ লোকের যাতায়াতের রাস্তার সেতুর মূল দুই পিলার দৃশ্যমান হয়নি ৪ বছরেও

নিজস্ব প্রতিনিধি- মুন্সীগঞ্জের ৪ উপজেলা হতে যানজটবিহীন দ্রুত যাতায়াতের জন্য মোল্লাবাজার সেতুর মূল দুই পিলারের নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান হয়নি দীর্ঘ চার বছরেও। মোট আট পিলারের উপর এই সেতুটি নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও নদীর মধ্যে যে দুটি পিলার নির্মাণ হওয়ার কথা  এখনো দৃশ্যমান হয়নি। ইতিমধ্যে ব্রিজ নির্মাণের সময়সীমা একবার শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় বার  শেষ হওয়ার পথে। তারপরেও দৃশ্যমান হয়নি মূল দুই পিয়ার। এই ব্রিজের নির্মাণ কাজের গতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।

মূন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গীবাড়ি, লৌহজং ও সিরাজদিখান উপজেলার প্রায় ১০ লাখ লোকের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ  ঢাকার কেরানীগঞ্জের মোল্লারহাট সেতুটি নির্মাণ কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। মুন্সীগঞ্জের বেতকা চৌরাস্তা হতে পাশের সিরাজদিখান উপজেলা হয়ে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে দিয়ে ঢাকার পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কপথে দূরত্ব  ৪২ কিলোমিটার। আর যেতে সময় লাগে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। আর একইস্থানে বেতকা হতে  বালুচর মোল্লারহাট সেতু দিয়ে ঢাকার পোস্তগোলা মাত্র ১৮ কিলোমিটার, সময় লাগবে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। সেতুটি নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ না হওয়ায় দুই পারের লাখ লাখ মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার এবং দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ফেরি দিয়ে নদী পারাপার হতে হচ্ছে। সেতুটি মুন্সীগঞ্জের শেষ সীমানা সিরাজদিখানের বালুচরের পাশেই ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শেষ সীমানা মোল্লাহাট ধলেশ্বরী শাখা নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে।

২০১৮ সালের ১৮ জুন সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২৫২ মিটার লম্বা আর ১০ মিটার প্রস্থ সেতুটি রিভাইজার হচ্ছে ৩৫২ মিটার। সেতুটিতে ৮টি পিয়ার নির্মাণ করা হবে তার মধ্যে নদীতে দুইটি আর দুই পারের ভরাট জমিতে তিনটি করে ছয়টি। সেতুটি নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ জেলার মধ্যে সেতুবন্ধন হবে। সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার ২৮৪ টাকা। সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর  নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে আরেক দফা সময় বাড়িয়ে ১৭ নভেম্বর ২০২২ করা হলেও এখনো দৃশ্যমান হয়নি সেতুর মূল দুই পিয়ার।

গত এক যুগেরও অধিক সময়  আগে নির্মিত হয়েছে এই সেতুর দু-পাশের মুন্সীগঞ্জের বেতকা চৌরাস্তা হয়ে সিরাজদিখানের লালমিয়ারচর, সাপেরচর, বালুরচর, দঃকেরানীগঞ্জের মোল্লাহাট দিয়ে পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা সেতু-১ সংলগ্ন ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে সংযুক্ত হওয়া সড়কটি । সেতুর অভাবে সড়কটি সঠিক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে ঢাকা যাওয়া আসার সুযোগ থাকলেও বাধা মোল্লারহাট ধলেশ্বরী শাখা নদীর ওপর নির্মাণাধীন মোল্লাবাজার সেতু।

বেতকা ব্রিজ, লাল মিয়ার চর ব্রিজ, সাপের চর ব্রিজ, বালুরচর ব্রিজ, তেঘরিয়া ব্রিজসহ পিচ ঢালাই করা রাস্তা থাকলেও এই মোল্লারহাট সেতুটিই সকল নির্মাণকে কার্যকরী হতে দিচ্ছে না। নির্মাণাধীন সেতুটির দুই প্রান্তের সড়ক ১০বছর আগে পিচ ঢালাই করা হলেও ব্রিজ না থাকায় তেমন কোন কাজে আসেনি সরকারের এই উন্নয়ন প্রকল্পটি।

সরেজমিন ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সেতূর ধলেশ্বরী শাখা নদীর দক্ষিন পারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। তবে ওই অফিসে গিয়ে মাত্র একজন ব্যক্তিকে পাওয়া গেলেও তিনি ওই সেতু নির্মাণের ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি। ওই সেতু আটটি পিয়ারের উপর নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও দুই পারে তিনটি করে ছয়টি পিয়ার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এখনো দৃশ্যমান হয়নি নদীর মধ্যের মূল দুই পিয়ার। ওই সেতুতে কাজ করতে কোন শ্রমিককে দেখা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, সেতুটি ঘিরে রয়েছে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা। দুই পারে দেশের শীর্ষস্থানীয় হাউজিং কোম্পানির প্রজেক্ট। তারা কমদামে জমি কিনার জন্য সেতু নির্মাণে ষড়যন্ত্র করছে। তাছাড়া প্রতিদিন অর্ধলক্ষ লোক ও পণ্যসামগ্রী এ সেতুর পাশের গুদারা ঘাটের নৌযান দিয়ে নদী পারাপার হয় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকার ছড়াছড়িতো রয়েছেই।

ওই নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশ দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ফেরি দিয়ে যাতায়াত করা শারমিন তার ৬০ বছরের অধিক বয়স্ক দাদিকে নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় চোখের ডাক্তার দেখাতে। এই ঘাটের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ফেরি দিয়ে বাড়ি ফিরছেন তিনি। দাদিকে জাপসে ধরে ওই ফেরির দুই পাশের রাস্তায় হেঁটে পার হচ্ছেন।  তিনি বলেন, সকাল বেলায় ঢাকায় গিয়েছিলাম দাদিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য । নদীর উপরে ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় নদী পারাপারের জন্য একটি ফেরি থাকলেও দুই ধারে রয়েছে দীর্ঘ কাচা রাস্তা ওই রাস্তা পায়ে হেঁটে পার হয়ে তারপর উঠতে হয় ফেরিতে। অসুস্থ দাদীকে নিয়ে ফেরীতে উঠতে এবং ফেরি পার হয়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।যদি ব্রীজটার কাজটা দ্রুত শেষ করা হতো তাহলে আমরা খুব সহজেই এই নদী দিয়ে পার হতে পারতাম।
বাবুল নামের অপর যাত্রী বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে গেল আর আমাদের খালের উপরে একটি ছোট্ট সেতু দীর্ঘদিন যাবত কাজ শুরু হলেও এখনো নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না। আমাদের আসলে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতা আতাউর বলেন, প্রতিদিন ঢাকার শনিআখড়া হতে  এ এলাকায় মাছ বিক্রি করতে আসি । ১৫ বছর যাবত এভাবেই টলার দিয়ে পার হচ্ছি। দীর্ঘ ছয় বছর আগে এখানে ব্রিজ  নির্মাণ কাজ শুরু হয় চিন্তা করছিলাম ব্রিজের উপর দিয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করতে পারবো । কিন্তু দীর্ঘদিন হলেও ব্রিজের কাজ শেষ হচ্ছে না । তাই ঝড়-বৃষ্টিতে মাছের হাড়ি মাথায় নিয়ে এই নদীর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছি।
ওই পথের সিএনজি  চালক মোঃ তপন বলেন,  ব্রিজ হলে টঙ্গীবাড়ি হতে মানুষ ৪০ মিনিটের কম সময়ে ঢাকা যেতে পারত। কিন্তু এখন ভেঙে অনেক সময় বেশি লাগছে। পদ্মা সেতুর আগে এই সেতুর কাজ শুরু করা হয়েছে ।পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়ে গেল।  কিন্তু ছোট্ট একটি সেতুর কাজ শেষ হচ্ছেনা।

সুরমা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদারের লোক মাসুম মিয়া বলেন, সেতু নির্মাণে আমাদের অনেক সমস্যা। সমস্যা আপনাদের কাছে বলে লাভ নাই । আমাদের সমস্যা বলতে হইবে ইঞ্জিনিয়ারের লগে। আমাদের দিয়ে যদি কাজ না হয় তাহলে ইঞ্জিনিয়ার আমাদের কাজে রাখছে কেন।

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী কাজী মাহমুদুল্লাহ বলেন, এই সেতুটির ওয়ার্ককাটার হয়  ২০১৮  সালের ৩১মে  । নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর।    পরে আরেক দফা সময় বাড়িয়ে এ বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এবারও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না পুনরায় আবার সময় বাড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ৩৩ কোটি ২৭ লক্ষ ৪২ হাজার ২৮৪ টাকা ব্যায়ে নির্মিত হবে সেতুটি। ঠিকাদার সুরমা এন্টারপ্রাইজ এই সেতুর কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন। করোনার সময় কাজ বন্ধ ছিল । ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কাজের গতি কম ছিল। জমি অধিগ্রহণ এখনো সম্পন্ন হয়নি । জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়াতে দেরি হচ্ছে। যদি ঠিকাদার জনবল না বাড়ায় তাহলে আগামী বছরও ব্রিজ নির্মান সম্ভব  হবে না।কাজ একেবারে স্লো চলতাছে ঠিকাদারকে আমরা মুখে অনেকবার সতর্ক করছি।

Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*