শেখ রাসেল ফখরুদ্দীন :
বিক্রমপুরের পাঐলদিয়া গ্রামের কন্যা উৎপলা সেন। তিনি ১৯২৪ সালের ১২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। উৎপলা প্রথমে গানের তালিম পান মা হিরণবালা দেবীর কাছে, তারপর উস্তাদ গুল মোহম্মদ খানের কাছে। বিংশ শতাব্দীর বাংলা গানের একজন প্রধান গায়িকা উৎপলা সেন। মাত্র তের বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে উৎপলা প্রথমত জনসমক্ষে আসেন। ১৯৩৯ সালে উৎপলার গানের প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়।
১৯৪১ সালে উৎপলার কন্ঠে “এক হাতে মোর পূজার থালি” গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। তার গানে সোনালী যুগে প্রেম এবং বিরহের গানে একটি বিশিষ্ট বিষাদের সুর বিদ্যমান। উৎপলার স্বামী কণ্ঠশিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। উৎপলা তার স্বামী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় , হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং অন্য গায়কদের সাথে অনেক জনপ্রিয় ডুয়েট গানও গেয়েছেন। এখানে উল্লেখ থাকে যে, উৎপলা প্রথমে বেণু সেনের সাথে বিবাহে আবদ্ধে হয়েছিলেন , বেণু সেন মারা গেলে ১৯৬৮ তে তিনি তার সতীর্থ সঙ্গীত শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন ।
চল্লিশ দশকের গোড়ায় উৎপলা কলকাতা চলে যান। তারপর থেকে আকাশবাণী (All India Radio)র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহুদিন। বহু বাংলা সিনেমায়ও গান করেছেন তিনি। রানী এলিজাবেথ ভারতে এলে বিক্রমপুরের আরেক কন্যা সরোজিনী নাইডু উৎপলাকে ডেকে গান শোনাতে বলেন। উৎপলার গান শুনে রানি মুগ্ধ হয়ে যান । পশ্চিমবাংলার রাজ্যপাল থাকার সময় পদ্মজা নাইডু গভর্নর হাউসের একটা ঘরই ছেড়ে রেখেছিলেন উৎপলার জন্য, যাতে আকাশবাণী ভবন থেকে গান করে মাঝপথে উৎপলা বিশ্রাম নিতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট তখন এরশাদ। ঢাকায় সার্ক অধিবেশন যেখানে হয়, সেখানে গান গাওয়ার কোনও রীতি ছিল না, অথচ প্রেসিডেন্ট এরশাদের অনুরোধে উৎপলা সেখানেই গাইতে ডাক পান। উৎপলা বাংলা, হিন্দি ছাড়া উর্দুতেও গান গেয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ওড়িয়া, ভোজপুরী, এমনকী ইংরেজিতেও। তাঁর বিখ্যাত গান ‘হরিনাম লিখো দিয়ো অঙ্গে’ ইংরেজি তর্জমা করে কানাডা রেডিয়ো থেকে প্রচারিত হয়।
উৎপলা প্রায় ৬০০০ এর বেশি সিনেমা এবং রেকর্ডের গানের অধিকাংশই আজ বিস্মৃতপ্রায়। ২০০৫ সালের ১৩ মে ক্যান্সারে আকান্ত হয়ে বিক্রমপুরের কৃতি সেন উৎপলা সেন পরপারে পাড়ি জমান।