টঙ্গীবাড়িতে পদ্মায় গোসলে নেমে নিহত বাপ ছেলেসহ ৩ জনকে একই কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন
নিজস্ব প্রতিনিধি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকার পদ্মার শাখা নদীতে গোসল করতে নেমে বাপ ছেলেসহ নিহত তিনজনকে একই কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল চারটার দিকে তাদের ঢাকাস্থ্ মিরপুরের রায়েরবাগ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের আত্মীয় বিথী আক্তার।
এর আগে শুক্রবার (১২ ) এপ্রিল বিকাল সাড়ে চারটার দিকে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকার পদ্মার শাখা নদীতে গোসল করতে নেমেছিলেন ৩০/৩৫ জন। অল্প পানিতেই গোসল করতে ছিলেন তারা। হঠাৎ করে এক শিশু পা পিছলে পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করতে যান মোট ৭ জন। পা পিছলে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করে ৪ জন ফিরে আসলেও নিখোঁজ হন বাবা-ছেলে সহ তিনজন। নিখোঁজের পর তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের সদস্যরা।
নিহতরা হলো ঢাকায় রেলওয়ে কর্মকর্তা রিয়াদ আহমেদ রাজু, তার ছেলে রামিন আরিদ ও ভায়রা ব্যাংক কর্মকর্তা জুয়েল রানা।
জানাগেছে, নিহত রেলওয়ে কর্মকর্তা টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামের হারুন রশিদ মোল্লার একমাত্র ছেলে। রিয়াদ আহমেদ রাজুদের দিঘীরপাড় গ্রামের বাড়ি প্রায় দুই যুগ আগে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পরে তারা ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোড এলাকার বসবাস করে আসছিলেন। এ বছর বড় হজ্জ করতে সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল রাজুর। সে উপলক্ষে চাচার সাথে দেখা করতে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেশনাল গ্রামের ইকবাল হোসেন এর বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে সেসহ তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন মিলে ৩০ থেকে ৩৫ জন চাচার বাড়িতে এসে পৌঁছান। পদ্মা নদীতে ঘুরা শেষে শুক্রবার সন্ধার দিকে ঢাকা ফেরার কথা ছিল তাদের।
অন্যান্য আত্মীয়র সাথে নিহত রেলওয়ে কর্মকর্তা রিয়াদ আহমেদ রাজুর স্ত্রী তার তিন ছেলে ও তার অপর নিহত ভায়রা ওয়ান ব্যাংক কর্মকর্তা জুয়েল রানা ও তার স্ত্রী দুই ছেলে সহ মোট ৩০ হতে ৩৫ জন শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তার চাচার বাড়ি হতে বের হন। পরে তারা দিঘীরপাড় এলাকার পদ্মা নদী ঘাট হতে টলার ভাড়া নিয়ে প্রথমে হাসাইল বাজার এলাকায় যান। পরে হাসাইল হতে ফিরে উপজেলার ধানকোড়া এলাকার পদ্মা নদীর চরে নামেন। পদ্মার চরে নেমে তারা তার পাশের নদীতে ৩ জন ছাড়া বাকি সবাই গোসল করতে নামেন। এ সময় অল্প পানিতেই তারা গোসল করছিলেন। হঠাৎ করে এক শিশু পদ্মা নদীর মধ্যে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করতে যান ৭ জন। এদের মধ্যে ওই শিশুকে উদ্ধার করে ৪ জন ফিরে আসলেও নিখোঁজ হন ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোড এলাকার হারুনুর রশিদ মোল্লার ছেলে রিয়াদ আহমেদ রাজু (৪৫), তার ছেলে রামিন আরিদ(১৬) ও তার ভায়রা জুয়েল রানা (৪৫)। পরে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এবং নিহত রামিন আরিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয় আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায়। নিহত দুই ভায়রার মরদেহ শুক্রবার রাতেই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। আর আর রামিনীর মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায় আজ আর আরিদের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায় আজ দুপুরে।
পরে তাদের জানাজা শেষে আজ বিকেল ৪টার দিকে ঢাকাস্থ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিহতের এক নিকট আত্মীয় বলেন বিকেল চারটার দিকে মিরপুর রায়েরবাগ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাদের পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নিহতের অপর নিকটাত্মীয় বিথী আক্তার বলেন, নিহত তিনজনকে আজ বিকাল ৪ টার দিকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আমাদের পরিবারের লোকজন সবাই ওইখানে লাশ দাফন করতে গিয়েছিল।